২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৫:৩৬ পিএম

এমবিবিএস কারিকুলামে রেগুলেটরি বডি খুব গুরুত্বপূর্ণ: ডা. হেলাল উদ্দিন 

এমবিবিএস কারিকুলামে রেগুলেটরি বডি খুব গুরুত্বপূর্ণ: ডা. হেলাল উদ্দিন 
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা একটি চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসকরা একটি রেগুলেটরি বডির আওতায় চিকিৎসা সেবা দেন। এই বডির নাম বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল এসোসিয়েশন (বিএমডিসি)।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: এমবিবিএস কারিকুলামে রেগুলেটরি বডি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০২০-২৩ এর অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা একটি চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসকরা একটি রেগুলেটরি বডির আওতায় চিকিৎসা সেবা দেন। এই বডির নাম বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। কিন্তু চিকিৎসক ছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবীদেরও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে হয়। তাদের জন্য বিএমডিসির আলোকে একটি পৃথক রেগুলেটরি বডির প্রয়োজন। যার মধ্য দিয়ে অপচিকিৎসা দূর করা সম্ভব হবে। 

তিনি বলেন, দেশে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মানসিক রোগের হার ১৮ শতাংশের বেশি। আর শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া বছরে ১০-১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন। দেশে মাত্র ৩৫০ জন সাইকিয়াট্রিস্ট, ৫০০ এর বেশি কিছু সাইকোলজিস্ট আছেন। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও সাইকিয়াট্রিস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কারদের সংখ্যাও দেশে অপ্রতুল।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০০ শয্যা থেকে গত মাসে ৪০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল ৫০০ শয্যার এবং সেটি আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে ৪০টি শয্যা আছে। এ ছাড়া মেডিকলে কলেজসমূহ ও কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও মানসিক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগে মানসিক স্বাস্থ্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি সংস্থা, মাদক নিরাময় কেন্দ্রসমূহ (সরকারি-বেসরকারি) মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই সেবার পেশাজীবী ও সমস্যার মাত্রার বিপরীতে ডকুমেন্ট বা নিয়মনীতি কর্মকৌশল অসংখ্য।

এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইন আছে। মানসিক রোগীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি রয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে আমাদের কর্মকৌশল রয়েছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এনডিডি প্রটেকশন ট্রাস্ট আইন রয়েছে। এনডিডি অটিজম কর্মকৌশল রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ আছে। যেটি বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশে স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ চলছে। এদিক থেকে বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান।

ডা. হেলাল বলেন, মানসিক চিকিৎসার বিপরীতে চিকিৎসা সঙ্কট অর্থাৎ রোগ আছে কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯২ থেকে ৯৪ শতাংশ। কারণ চিকিৎসক স্বল্পতা, পেশাজীবি স্বল্পতাসহ সব মিলিয়ে ৯২ থেকে ৯৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগছেন। এই ধরনের মানুষ চিকিৎসা সেবার আওতার বাইরে রয়েছেন। এই সঙ্কট আমাদের পূরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে। এই কর্মকৌশল তৈরিতে প্রধান কনসালটেড ও প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সায়েমা ওয়াজেদ। এখন আমাদের সর্বজনীন, সমন্বিত, বহুখাত ভিত্তিক, মানসম্মত ও কার্যকরি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসিক সাস্থ্য সেবা তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কর্মকৌশল তৈরির চারটি পরিকল্পনা ছিলো। এই পরিকল্পনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক পরিকল্পনা এবং দেশের টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা এসডিজির সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা চারটি হলো মানসিক স্বাস্থ্যের কার্যকরি নেতৃত্ব শক্তিশালী করা, সর্বজনীন সমন্বিত টেকশই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন ও মানসিক রোগ প্রতিরোধ করা ও মানসিক স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা এবং তথ্য উপাত্ত ব্যবস্থাপনা করা।

এই চিকিৎসক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পাশাপাশি সমাজ সেবকদের ভূমিকা আছে। আমাদের মনরোগ বিশেষজ্ঞ দরকার। কিন্তু এগুলোতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। গত দুই বছরের আত্মহত্যা বেড়েছে। কীভাবে এটি রোধ করা যায় সেই কৌশল এতে রয়েছে।

ডা. হেলাল বলেন, পিতামাতা ও সবার সচেতনতা দরকার। আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংষ্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এটি যুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রচার এবং প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রেটিক পাঁচটি বিষয়ের উপর গাইড লাইন তৈরি করেছে। এই গাইড লাইন ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায় নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কৌশলগত এই চারটি পরিকল্পনা মেনে চললে মানসিক স্বাস্থ্যে কোনো ধরনের বিলম্ব হবে না। সব কিছুকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি বিষয়, সেটি হলো মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশলকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের জায়গায় আমাদের কোনো ধরনের ঘাটতি নেই।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক